মালয়েশিয়ায় সদ্য জয়ী মাহাথির সরকার বাংলাদেশের ওপর এ কেমন জুলুম চাপালো

বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়া স্থগিত করেছে মালয়েশিয়ার সরকার। গতকাল শুক্রবার সরকারের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রবাসী এক বাংলাদেশির নেতৃত্বে একটি মানবপাচার সিন্ডিকেটের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সরকার লোক নেওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

বাংলাদেশ থেকে দশটি এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি চলছিল। প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে একটি মানবপাচার চক্র মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে ওই এজেন্সিগুলোকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই বছরে অন্তত ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পর দেশটির সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলো।

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারানকে উদ্ধৃত করে দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম স্টার অনলাইন জানিয়েছে, ওই চক্রের বিষয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দেশেই রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে ওই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর।

খবরে বলা হয় এক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, প্রত্যেক বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় কাজের জন্য ২০ হাজার মালয়েশীয় রিঙ্গিত দিয়েছে। স্থানীয় এজেন্টরা এর মধ্যে অর্ধেক অর্থ, অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার রিঙ্গিত দিয়েছে সরকারিভাবে নিবন্ধিত এজেন্টদের হাতে। তবে সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য স্টার জানায়, একজন শ্রমিক পাঠানোর নথিভুক্তি ও পরিবহনে খরচ হয় ২ হাজার রিঙ্গিতের চেয়েও কম। ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখের বেশি বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছে। এছাড়া আরও লক্ষাধিক শ্রমিক দেশটিতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন।

খবরে বলা হয়েছে, এই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর ‘দাতুক সেরি’ পদমর্যাদা রয়েছে। হাজার কোটির এই মানবপাচার ব্যবসাকে সংগঠিত করা ও বৈধতা দেওয়ার পেছনে এই ব্যবসায়ীর ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ায় ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব থাকার কারণে ২০১৬ সালে দুই দেশের সরকারের মধ্যে এই বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। তার প্রভাবেই মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগের জন্য বাংলাদেশের মাত্র ১০টি কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এই দশটি কোম্পানিও রাতারাতি গজিয়ে উঠেছে।

সূত্র আরো জানিয়েছে, ওই বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ধনী থেকে আরো ধনী হয়েছেন এবং তার ঘনিষ্ঠ ও সহযোগী ব্যবসায়ীরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। শ্রমিকদের কাছ থেকে নেওয়া টাকার কিছু অংশ তিনি উভয় দেশের রাজনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের দেন। পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়সের ওই ব্যক্তি এক মালয়েশীয় নারীকে ১৫ বছর আগে বিয়ে করেছেন।

সূত্রটি আরো জানায়, বাংলাদেশের তুলনায় ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া যেতে শ্রমিকদের খরচ কম। এই দেশগুলোর শ্রমিকদের খরচ পড়ে আড়াই হাজার রিঙ্গিতের মতো।